হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫, চুক্তির অংশ হিসেবে সুহায়েল ইবনে আমর এমন এক শর্ত আরোপ করেছিল যা মানা ছিল মুসলিমদের জন্য সত্যিই কঠিন। এই শর্ত দেওয়ার পেছনে সুহায়েলের ব্যক্তিগত এজেন্ডাও ছিল: সে ইতিমধ্যে মুসলিমদের কাছে তার এক ছেলেকে ‘হারিয়েছে’; অন্য ছেলেকে জোর করে বেঁধে রেখেছে, তাকে সে হারাতে চায় না ।

হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

অন্যদিকে, সাহাবিদের মনোভাবটাও খুবই স্বাভাবিক : ‘কেউ স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে এলে তাকে আমরা কেন ফিরিয়ে দেব? তা ছাড়া যেসব নিরপরাধ মুসলিম মক্কায় নির্যাতিত হচ্ছেন তাঁদের রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’ তাই তাঁদের কাছে এই শর্তটি শুধু কঠোরই নয়, চরম অবমাননাকর বলেও মনে হয়েছে। অধিকাংশ সাহাবিই মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এসেছেন। এই শর্ত যদি ছয় বছর আগে প্রযোজ্য হতো, তাহলে মদিনায় ইসলামের অস্তিত্ব থাকত না। তা ছাড়া এই শর্ত বাস্তবায়ন করলে মুসলিমদের সংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে । কিন্তু সাহাবিদের জোর আপত্তির মুখেও সুহায়েল অনড়। সে আগের মতোই জোর দিয়ে বলল, “না, এটাই শর্ত।”

সুহায়েল ইবনে আমর যখন এই শর্ত দিচ্ছে, ঠিক তখনই তার বন্দি ছেলে আবু জান্দাল ইবনে সুহায়েল মুসলিমদের শিবিরে এসে হাজির! সুবহানাল্লাহ! আবু জান্দালের শেকল তখনও তার হাতের সঙ্গে বাঁধা, সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। তিনি মুসলিমদের কাছে এসে কাতর কণ্ঠে ফরিয়াদ জানালেন, “হে মুসলিমগণ, আমাকে সাহায্য করুন! হে মুসলিমগণ, আমাকে রক্ষা করুন!” সুহায়েল দূর থেকে নিজের ছেলেকে দেখে চিনতে পারল ।

এবার সে নবিজির (সা) দিকে ফিরে বলল, “এখান থেকেই এই শর্তের প্রয়োগ শুরু হবে।” (অর্থাৎ ‘আবু জান্দালই হবেন প্রথম ব্যক্তি, যাকে এই শর্ত অনুসারে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।’) নবিজি (সা): আমরা তো চুক্তিপত্র লেখা শেষ করিনি। আমরা এখনও শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।

সুহায়েল: এই শর্তে রাজি না হলে চুক্তির ব্যাপারটি এখানেই শেষ হয়ে যাবে। নবিজি (সা): তাঁকে আপনি আমাকে উপহার হিসেবে দিন। তারপর থেকে আমরা চুক্তির শর্ত শুরু করব। শুধু একটি মাত্র উপহার । সুহায়েল: না। আমি তাঁকে উপহার হিসেবে দেব না।

নবিজি (সা) (একাধিকবার অনুরোধের সুরে): শুধু এবারের জন্য একটি ব্যতিক্রম করুন, তাঁকে আমাকে উপহার দিন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সুহায়েল (প্রতিবারই জোর দিয়ে): না। আমি তাঁকে উপহার হিসেবে দিচ্ছি না । এই হলো শর্ত । হয় তা মেনে নাও, নইলে চুক্তির এখানেই শেষ । এই কথোপকথনের একপর্যায়ে সুহায়েলের সঙ্গী মিকরাজ সবাইকে আশ্বস্ত করে বলে, “ঠিক আছে, আমরা অন্তত এখন থেকে তাঁর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেব (অর্থাৎ তাঁকে নির্যাতন করা হবে না)।”

আলোচনার অচলাবস্থা ভাঙার উদ্দেশ্যেই মিকরাজ এমন কথা বলেছিল বলে ধারণা করা যায়। ওদিকে আবু জান্দাল কাছে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন; আলোচনার সিদ্ধান্ত যে স্পষ্টতই তাঁর বিরুদ্ধে যেতে চলেছে তা অনুমান করতে পারছিলেন। তাই তিনি অনুনয়ের সুরে কেঁদে বললেন, “হে মুসলিমগণ, তোমরা কি আমাকে মুশরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেবে যখন আমি মুসলিম হয়ে তোমাদের কাছে এসেছি? তোমরা কি দেখছ না তারা আমার সাথে কী আচরণ করেছে?”

ইবনে হিশামের বর্ণনা অনুসারে, তাঁর শরীরে অত্যাচারের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল মুশরিকরা চাবুক, দোররা, শেকল ইত্যাদির যথেচ্ছ ব্যবহারে তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত করেছে। একপর্যায়ে নবিজি (সা) তাঁকে সরাসরি সম্বোধন করে বললেন, “হে আবু জান্দাল, ধৈর্য ধরো। আল্লাহ তোমার জন্য একটি পথ করে দেবেন।”

 

হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ঘটনার এই পর্যায়ে উমর (রা) উঠে দাঁড়ালেন। তিনি আবু জান্দালের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “হে আবু জান্দাল, ধৈর্য ধরো। তাদের বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই।” এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর তরবারির দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন। তিনি আবু জান্দালকে বোঝাতে চাইলেন, ‘এই তরবারিটি তাদের (সুহায়েল এবং মিকরাজ) বিরুদ্ধে ব্যবহার করো।’

অর্থাৎ তিনি আবু জান্দালকে একটি সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সবকিছুর উপরে সুহায়েল তো তাঁর পিতা, তাই তিনি এই সুযোগটি নিলেন না। তাঁকে শেকল দিয়ে বেঁধে মক্কায় ফেরত পাঠানো হলো। তবে মিকরাজের কথামতো তারপর থেকে মক্কায় তাঁকে আর নির্যাতন করা হয়নি।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment