সুরা ফাতহ নাজিল হওয়া | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫, ফেরার পথে উমর (রা) তাঁর কৃতকর্মের জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, তাঁকে নবি করিমের (সা) কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাই তিনি উট নিয়ে নবিজির (সা) কাছাকাছি গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা শুরু করার চেষ্টা করলেন। তিনি বললেন, “সালাম”, কিন্তু কোনো সাড়া মিলল না । তিনি দ্বিতীয়বার বললেন, “সালাম”, কিন্তু এবারও কোনো উত্তর নেই তৃতীয়বারও কোনো সাড়া না পেয়ে উমরের (রা) মনে দুশ্চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। তিনি ভাবলেন, তাঁর সব শেষ হয়ে গেছে, তিনি হয়তো ক্ষমা পাওয়ার সব সুযোগ হারিয়ে ফেলেছেন ।
সুরা ফাতহ নাজিল হওয়া | হুদায়বিয়ার সন্ধি ( চুক্তি )-৫ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ঠিক সেই সময় একজন এসে তাঁকে বলল, “নবিজি (সা) আপনাকে ডাকছেন।” তিনি তখনও ভাবছেন, “আমার তো কোনো আশা নেই।” তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখলেন, নবিজির (সা) মুখ আনন্দে জ্বলজ্বল করছে, তাঁর মুখমণ্ডল থেকে যেন আলোর ছটা বেরিয়ে আসছে। নবিজি (সা) পবিত্র কোরানের বিখ্যাত সুরা ফাতহ তেলাওয়াত করা শুরু করলেন: “(হে নবি) নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।
এ এজন্য যে, তিনি তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিগুলো মাফ করবেন, তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন এবং তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করবেন। আর (এই ঘটনার মাধ্যমে) আল্লাহ তায়ালা তোমাকে বড় রকমের সাহায্য করবেন।” [সুরাহ ফাতহ, ৪৮:১-৩] ঠিক তখনই পুরো সুরাটি নাজিল হয়। সুরার প্রথম আয়াত—‘নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি’—শুনে উমর (রা) বললেন, “এটা কি বিজয়?”

নবিজি (সা) বললেন, “আল্লাহর কসম, এটা একটা বিজয়।”
উমর (রা) চিৎকার করে বললেন, “আল্লাহু আকবার!” তারপর তিনি তাঁর উট নিয়ে মুসলিমদের লাইনের একবার সামনে, একবার পেছনে যেতে যেতে বলতে থাকলেন, “আল্লাহ আমাদের সবচেয়ে বড় বিজয় দিয়েছেন।”
নবিজি (সা) সুরাটির প্রশংসা করে বলেছেন, “আল্লাহ আমার কাছে এমন একটি সুরা নাজিল করেছেন যা আমার কাছে পৃথিবীর যে কোনো কিছুর চেয়ে প্রিয়।”
সুরা ফাতহে অনেক কিছুর ভবিষ্যদ্বাণী আছে যা নিয়ে আমরা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করব। তবে সুরাটির অন্যতম প্রধান প্রতিপাদ্য হলো সাহাবিদের প্রশংসা করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সবচেয়ে কাব্যিক ভঙ্গিতে চমৎকার উদাহরণ দিয়ে তাঁদের প্রশংসা করেছেন। তিনি তাঁদের একটি সুন্দর গাছের সঙ্গে তুলনা করেছেন যেটি একজন কৃষক রোপণ করেছেন এবং গাছের ফলনে কৃষক সন্তুষ্ট (৪৮:২৯)।
এখানে কৃষক হলেন নবিজি (সা), আর সাহাবিরা যা করেছেন তাতে তিনি খুশি। নিঃসন্দেহে এটি ছিল সাহাবিদের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেই পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাই আল্লাহ সাহাবিদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। তিনি তাঁদের জন্য ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি একটি বিশাল বিজয়েরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা ছিল খায়বার যুদ্ধ (৪৮:২০) {১}।
সুরা ফাতহ নাজিল হওয়ার পর পুরো পরিস্থিতিই বদলে গেল। যে মুসলিমরা এতক্ষণ বিষণ্ণ ছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় শুরু করলেন। এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মতাত্ত্বিক বিষয় রয়েছে। সুরা ফাতহ নাজিল হওয়ার আগে তাঁরা ভেবেছিলেন, চুক্তির বিষয়টা হয়তো সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে আসেনি। হতে পারে এটা নবিজির (সা) ইজতেহাদ। তাই তাঁরা মনে করেছিলেন, হয়তো এটাই সর্বোত্তম সমাধান নয়। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ সুরা ফাতহের মাধ্যমে সবকিছু পরিষ্কার করে দেন।
আরও পড়ুনঃ