আবদুল মুত্তালিব: আবদুল্লাহকে কোরবানি করার ব্রত | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর, মহানবি মুহাম্মদের (সা) পিতামহের নাম ছিল আবদুল মুত্তালিব। তবে এটি তাঁর আসল নাম নয়। তাঁর আসল নাম ছিল শায়বাত আল হামদ। শায়বা’ অর্থ হলো সাদা চুল (সাধারণত বৃদ্ধ অবস্থায় মানুষের চুলের রঙ যেমন হয়)। জন্মের সময় আবদুল মুত্তালিবের চুলের কিছু অংশ ছিল সাদা। ফলে তার নাম রাখা হয়েছিল ‘শায়বাতুল হামদ’ অর্থাৎ প্রশংসার শায়বা ।
শায়বাতুল হামদের মা যখন গর্ভবতী ছিলেন তখন তাঁর স্বামী হাশিম মারা যান। তিনি কাউকে জানাননি, এমনকি তাঁর ভাইদেরও জানাননি যে তিনি তখন গর্ভবতী ছিলেন। কারণ তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন যে জানাজানি হলে জন্মের পর তাঁর বাচ্চাকে তাঁর কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তাই স্বামী মারা গেলে তিনি ইয়াসরিবে ফিরে যান, এবং সেখানেই তাঁর সন্তানের জন্ম হয়।

জানা যায়, একদিন শায়বাতুল হামদের চাচা (তাঁর নাম ছিল মুত্তালিব) ইয়াসরিবে সফরে যান। সেখানে তিনি জানতে পারেন যে শায়বা তাঁর ভাতিজা। তখন তিনি শায়বাকে মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক ফন্দি আঁটেন। তিনি আসলে শিশুটিকে অনেকটা অপহরণ করেই নিয়ে যান। কেউ কেউ বলে, তিনি শিশুটিকে মক্কায় তার বংশগৌরবের কথা শুনিয়ে প্ররোচিত করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলে, শায়বার মা বিষয়টিতে রাজি ছিলেন। তবে অবশ্যই তার মামারা বিষয়টি জানতেন না।

আবদুল মুত্তালিব: আবদুল্লাহকে কোরবানি করার ব্রত | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
আবদুল মুত্তালিবের পুত্রসন্তানরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তিনি তাঁদের বললেন, “দেখো, আমি এক কথার মানুষ। আল্লাহ আমাকে দয়া করেছেন। এখন তাঁর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে আমাকে তোমাদের মধ্যে একজনকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি দিতে হবে।” তিনি কোন পুত্রকে কোরবানি দেবেন তা লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন বলে মনস্থির করেন। লটারিতে আবদুল্লাহর নাম ওঠে, যার বয়স তখন ছিল মাত্র ১৬ বা ১৭ বছর।
তিনি পুত্র আবদুল্লাহকে কাবার সামনে কুরবানি দিতে নিয়ে গেলে কুরাইশরা এর বিরোধিতা করে বলে ওঠে, “তুমি এটা করতে পারবে না। সে আমাদের সবচেয়ে প্রিয়পাত্র।” তারা আবদুল মুত্তালিবকে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করার জন্য কোনো এক নামকরা পুরোহিতের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেয়। পুরোহিতের দেওয়া সমাধান অনুসারে তিনি আবদুল্লাহর পরিবর্তে ১০০টি উট কোরবানি দেন। সেই থেকেই যদি কেউ কোন দুর্ঘটনাবশত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে মেরে ফেলে, তবে ‘ব্লাড মানি’ বা ‘রক্তের মূল্য’ হিসেবে ১০০টি উট দেওয়ার বিধান চালু হয়, যা পরবর্তী কালে শরিয়া এসে প্রতিষ্ঠিত করে।
আরো পড়ুনঃ